শের তারিকুল ইসলাম:- সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আর মাত্র দুই দিন বাকি। প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে টানতে বিভিন্ন পথ সভায়
চটকদার বক্তব্য দিচ্ছে। চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থী লড়াই করছে। মোটরসাইলে প্রতিকে হাজী শামিম আহমদ শামিম, আনারস প্রতিকে মজির উদ্দিন এবং ঘোড়া প্রতিকে রশিদ আহমদ। ২১ শে মে ভোট গ্রহণ হবে। উপজেলার ৪০টি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ভোটার প্রায় ১ লাখ ২৪ হাজারের বেশি। পুরুষ ভোটার ৬৫ হাজারের অধিক নারী ভোটার ৫৮ হাজার ছাড়িয়ে। তিনজন প্রার্থীর মধ্যে অল্প সময়ে তমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন আনারস প্রতিক প্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মজির উদ্দিন। বর্তমান চেয়ারম্যান হাজী শামিম আহমদ শামিমের নির্বাচনী কর্মী সমর্থক বেশি থাকলেও যত সময় গড়াচ্ছে সাধারণ ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থী হিসেবে মজির উদ্দিনকেই বেছে নিচ্ছে। আরেক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রশিদ আহমদ যেন ঠান্ডা মাথায় অন্য দুই প্রার্থীর চেয়েও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাওয়ার প্রাণপন চেষ্টা করছে।
তিন প্রার্থীরই নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। তিনজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। বর্তমান চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শামিম আহমদ গত নির্বাচনে ভোটারদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনি নির্বাচিত হলে পাথর কোয়ারী খুলে দিবেন। পাচ বছর পেরিয়ে গেলেও ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারী বন্ধই রয়ে যায়। এছাড়াও গত তিন বছর যাবত তিনি ইংল্যান্ডে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। যার কারনে জনগনের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে গেছেন। গত কয়েক মাস যাবত আবারো মাঠে নেমেছেন পুনরায় নির্বাচনে লড়বেন। গত নির্বাচনে দূর্বল প্রতিপক্ষ থাকায় সহজেই জয় ছিনিয়ে আনলেও এ যাত্রায় কঠিন পরিক্ষায় সমক্ষিণ হতে হচ্ছে তাকে। ক্লিন ইমেজধারী ও জনবান্ধব নেতা মজির উদ্দিনের সাথে লড়াই করতে হচ্ছে তাকে। অপর প্রার্থী রশিদ আহমদের যথেষ্ট ব্যক্তি ইমেজ এবং বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। নতুন দুই প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজের কাছে ধরাসায়ী বর্তমান চেয়ারম্যান শামিম। মজির উদ্দিন মাত্র ছয় মাসেই মাঠ গুছিয়েছেন। সব চেয়ে বড় কর্মসংস্থান পাথর কোয়ারী খুলে দেওয়ার চেষ্টা, মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা, এম সাইফুর রহমান কলেজকে সরকারীকরণ, উত্তর রণিখাই ও ইসাকলস ইউনিয়নে নতুন দুইটি কলেজ স্থাপন, ইসাকলস ও উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের সাথে উপজেলা সদরের বিকল্প সংযোগ সড়ক স্থাপন সহ নানান পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নির্বাচনী ইসতেহার ঘোষণা করেছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং সফল করতে বিভিন্ন পথসভায় সকলের সহযোগীতা চাইছে। তবে অন্য প্রার্থীদের ন্যায় নিজের জন্য ভোট চাইছেন না মজির উদ্দিন। মজির উদ্দিনের একটাই বক্তব্য, তিনজন প্রার্থীর তুলনায় তাকে যোগ্য মনে হলে একটা ভোট দিবেন। অন্যদিকে ভোটের মাঠে অশালীন বক্তব্য প্রদান করে বারবার আলোচনায় আসছেন বর্তমান চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শামিম আহমদ শামিম। মজির উদ্দিনকে কটাক্ষ এবং আঞ্চলিকতা টেনে এনে ভোটসমাজে সমলোচনার ঝড় তুলেছেন। তার সাথে সুর মিলিয়েছেন তেলিখাল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ কাজী আলফু মিয়া। বিভিন্ন পথ সভায় মজির উদ্দিন সহ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আপ্তাব আলী কালা মিয়াকে নিয়ে ব্যঙাত্মক মন্তব্য করেন। মজির উদ্দিন এসবে কর্ণপাত না করলেও কৌশলে সেসবের জবাব দিচ্ছেন আপ্তাব আলী কালা মিয়া। বাকযুদ্ধে দুই প্রার্থীর সমর্থকরা পথসভায় নিজেদের আগামী চেয়ারম্যান হিসেবে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও ২১ তারিখ ব্যালেটের মাধ্যমে প্রমাণ হবে কে হচ্ছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
এমএ পাশ মজির উদ্দিন উপজেলার ১৪৮ গ্রাম ইতোমধ্যেই চষে বেরিয়েছেন। উপজেলার ৯২টি গ্রামের প্রায় ৫০০০ হাজার ভোটারদের উপর সমিক্ষা চালানো হয়েছে। সমিক্ষায় দেখা যায়, ৪৮ ভাগ ভোটার চায় মজির উদ্দিনকে। ২৯ ভাগ ভোটারের পছন্দ বর্তমান চেয়ারম্যান শামিম আহমদ এবং রশিদ আহমদকে চায় ২৩ পার্সেন্ট ভোটার। এ নির্বাচনী সমিক্ষা ভুল প্রমানিত না হলে মজির উদ্দিনই হবে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের আগামী চেয়ারম্যান। তবে ঘোড়া প্রতিক প্রাপ্ত রশিদ আহমদের জনপ্রিয়তা দিনকেদিন বাড়ছেই। ভোটাররা বলছেন, দুই বছর পূর্বে যদি মাঠে নামতো তবে এ নির্বাচনে বড় অঘটন ঘটাতে পারতো রশিদ আহমদ। চেয়ারম্যান পদে কে জয়ী হচ্ছে তা নির্ধারিত হবে ২১ মে। রায় দেওয়ার অপেক্ষায় ভোটাররা।