ভারতীয় চিনি ও শাড়ি মজুদ রয়েছে গোডাউনে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে ৯৯৯ এ ফোন দিয়েছিল শরিফ নামে এক যুবক। ৯৯৯ কল সেন্টার থেকে রিসিভ করা ব্যক্তিটি কোম্পানীগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসার শরিফ আহমদের সাথে সংযুক্ত করে দেন। তখন সেই যুবক ডিউটি অফিসারকে জানান, টুকেরগাও জামাল মিয়ার গোডাউনে চিনি,ফেন্সিডিল ও ভারতীয় শাড়ি রয়েছে। ফোনালাপের ৫/৬ মিনিট পরেই চোরাচালান চক্রের সদস্যরা পুলিশ আসার খবর জেনে যায়। তরিঘরি করে গোদামের সকল ভারতীয় পণ্য সিলেট-ন ১১-০৬৩৬ নাম্বারবাহী পিকআপে লোড করে উধাও হয়ে যায়। ঘটনাটি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়। সেই যুবক শনিবার (২৭ মে) রাত ৮ টা ২৫ মিনিটের সময় ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ার ৩০ মিনিট পড়ে সব তথ্য ফাস হওয়ার আশঙ্কা অনুভব করে প্রতিবেদককে অবগত করেন। ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে কোম্পানীগঞ্জ থানা ডিউটি অফিসার শরিফ আহমদকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তথ্য ফাসের ব্যাপারটি অস্বীকার করেন। তিনি জানান, থানা সেকেন্ড অফিসার শাহ আলম সাহেবকে তথ্যস্থলে পাঠানো হয়েছে। কথা হয় এসআই শাহ আলমের সাথে। তিনি জানান, তথ্য ফাস হওয়ার কোনো কারন নাই। হয়তো কোনো সোর্স তথ্য ফাস করেছে। রাত ০৮ টা ২৫ মিনিটের সময় তথ্য পাঠানো হয়েছে আর এখন রাত ০৯ টা বাজে এই এত সময় পেরিয়ে গেলেও ঘটনাস্থলে না যাওয়ার কারন জানতে চাইলে তিনি অপারেশনের গাড়ি কাছে না থাকার কথা জানিয়েছেন। সূত্রে জানা যায়, জামাল মিয়ার মালিকানাধীন মেসার্স নকশি ট্রেডার্সের গোডাউনে গতরাতে প্রায় ২ শত বস্তা ভারতীয় চিনি মজুদ করা হয়েছে। মজুদকৃত এসব চিনি ভারতীয় লেবেলযুক্ত চটের বস্তা বদল করে নতুন বস্তায় ভর্তি করে উপজেলার বাইরে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল। এমন তথ্য প্রতিবেদকের কাছে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক যুবক। সীমান্তপাড়ে বসবাসকারী একাধিক যুবক প্রতিবেদককে জানান, বিজিবি ও পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে চিনির বস্তা থেকে চাঁদা নেন হেলাল,তৈয়ব আলী ও তোফায়েল। হয়তো এই কারনেই পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা ভারতীয় অবৈধ চিনি আটক করেন না।
সম্প্রতি কোম্পানীগঞ্জে বেড়েছে চোরাচালান। ভারত সীমান্তবর্তী সিলেটের এই উপজেলার প্রায় ১৪/১৫ কিলোমিটার সীমানাজুড়ে রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড়। পাহাড়ের উঁচুনিচু জঙ্গলঘেরা কাটাতারের ফাক দিয়ে বাণের পানির মতো ভারতীয় অবৈধসব চোরাইপণ্য দেশে প্রবেশ করছে। ভারতীয় চিনি, কসমেটিক্স ও শাড়ি বাংলাদেশের ক্রেতাদের প্রচন্ড চাহিদা। তাই চোরাকারবারিরা সীমান্তবর্তী সিলেট জেলা পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় পৌছে দিচ্ছে ভারতীয় অবৈধ সব পণ্য। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সীমান্তবর্তী
নাজিরগাও, বরমসিদ্দিপুর,কামালবস্তি,তুরং এলাকায় কয়েকটি চোরাকারবারি সিন্ডিকেট প্রতি রাতে শতশত মানুষের সাহায্যে ভারতের কাটাতারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে চিনি,কসমেটিক্স ও শাড়ির চালান নিয়ে আসে। অবৈধ এসব পণ্য ভারত সীমান্তবর্তী নাজিরগাও, বরমসিদ্দিপুর,কামালবস্তি,তুরং গ্রামের নির্দিষ্ট কয়েকটি স্পটে মজুদ করেন। যেসব মানুষ ভারত থেকে অবৈধ এসব পণ্য বহন করে বাংলাদেশে নিয়ে আসে তারা চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত। মজুদকৃত এসব পণ্য ভোর থেকে সকাল ৮/৯ টা পর্যন্ত মোটরসাইকেলযোগে উপজেলার টুকেরগাঁও ও পাড়ুয়া সাকেরা এলাকায় এনে দ্বিতীয় দফায় মজুদ করা হয়। নিরাপদ যোগ্য এসব স্থানে ভারতীয় লেবেল লাগানো চিনির বস্তা বদল করে নতুন বস্তায় ভর্তি করে গোদামজাত করে রাখা হয়। এবং শাড়ি ভর্তি বস্তা ও কসমেটিক্স সহ চিনির চোরাচালান পরবর্তিতে সুযোগ বুঝে সিএনজি,মাক্রোবাস, বাস অথবা ট্রাকযোগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পৌছে দেয় চোরাচালানীরা।
ভারত থেকে যেভাবে আসে চোরাচালান। বরমসিদ্দিপুর গ্রামের
বিজিবির কথিত লাইনম্যান হিসেবে পরিচিত হেলাল ও তৈয়ব আলী সীমান্তের ওপার থেকে শুরু করে এপার পর্যন্ত নিরাপত্তা দেয়। সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সীমান্ত পাড়ি দিতে হলে প্রতি বস্তা চিনির জন্য ২০০ টাকা,কসমেটিক্স ও শাড়ির চালানুপাতে চাঁদা আদায় করেন হেলাল ও তৈয়ব আলী নামের এই দুই যুবক। এরপর পুলিশি ঝামেলা এড়াতে তোফায়েল নামে কথিত আরেক লাইনম্যানকে চিনির বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা এবং কসমেটিক্স ও শাড়ির চালানুপাতে চাঁদা দিতে হয়।
চিনি চোরাচালানীদের সাথে পুলিশের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে গোয়াইনঘাট সার্কেল (সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার) অফিসার প্রবাস কুমার সিংহ প্রতিবেদককে বলেন, আমি ওসি হিল্লোল রায়কে জিজ্ঞেস করেছি। ওসি হিল্লোল রায় বলেন, ভারতীয় চিনির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ৯৯৯ এর তথ্য ফাসের বিষয়ে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আমি খবর নিয়ে দেখতেছি।