দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সুন্দর্যের লীলাভূমি সীমান্তবর্তী পর্যটন কেন্দ্র ভোলাগঞ্জ জিরো লাইন সাদা পাথরের প্রধান আকর্ষন “সাদা পাথর” চুরি হয়ে যাচ্ছে। সাদা পাথর চুরি রোধে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা খুদ পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা এই চোর চক্রকে অর্থের বিনিময়ে চুরি হতে সহায়তা করছে। রাত গভীর হতেই শত শত বারকি নৌকা লোড করে মূল্যবান সাদা পাথর চলে যাচ্ছে ১০ নং সাইটে। সেখান থেকে হাইড্রোলিক ট্রাকে লোড করে সাদা পাথর ধূপাগুল স্টোন ক্রাশিং এরিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে চোর চক্রের সদস্যরা।
সূত্রে জানা যায়, ভোলাগঞ্জ পুলিশ ফাড়িতে দায়িত্বরত এএসআই মাহফুজ ও এএসআই মুখলেছ এর নিয়োজিত লাইনম্যান এরশাদ শিকদারের নেপথ্যে শত শত বারকি নৌকা শ্রমিক ভোলাগঞ্জ জিরো লাইন থেকে মূল্যবান সাদা পাথর এনে ১০ নং সাইট নামক স্থানে মজুদ করা হয়। বিনিময়ে প্রতি নৌকা শ্রমিক লাইনম্যান এরশাদ শিকদারকে ১০০০ টাকা চাঁদা দিয়ে থাকেন। শতাধিক বারকি নৌকা থেকে ট্রিপপতি ১০০০ টাকা করে প্রায় দুই/আরাই লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন। প্রতিটি নৌকায় ৫৫/৬০ ফুট পাথর লোড নেওয়া যায়। প্রতিটি নৌকা সারা রাতে ২/৩ বারকি পাথর চুরি করতে পারে। এভাবে শতাধিক বারকি নৌকা প্রতি রাতে ২/৩ ট্রিপ দিতে পারলে ১১ হাজার থেকে ১৫ হাজার ফুট পাথর চুরি করতে সম্ভব হয়।
এদিকে পুলিশের এই দুই কর্মকর্তার চেয়ে সীমান্তরক্ষী বিজিবির সদস্যরাও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সেই নৌকা থেকেই বিজিবির নামে ট্রিপপ্রতি ৩০০ টাকা আদায় করা হয়। এছাড়াও ডিবি পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে পাথরবাহী এসব নৌকা থেকে ট্রিপপ্রতি ৩০০ টাকা আদায় করা হয়। এক বারকি নৌকায় সাদা পাথর লোড করে নিয়ে আসতে নৌকা শ্রমিককে তিনস্থানে যথাক্রমে পুলিশের নামে ১ হাজার,বিজিবির নামে ৩ শত ও ডিবির নামে ৩ শত টাকা চাঁদা দিতে হয়।
নাম প্রকাশ্যে এক বারকি শ্রমিক জানান, টাকা না দিলে পাথর আনা সম্ভব না। পাথর আনার সময় বজ্রপাত ও পানিতে ডুবে প্রায় সময় আমাদের সাথের শ্রমিক মার যায়। মারা যাওয়া এসব শ্রমিকদের পরিবারের পাশে কোনোদিন দাড়াতে দেখিনি এদের। এদেরকে চাঁদাই দিয়ে গেলাম। কোনোদিন কাজে লাগেনি এরা।
এদিকে বিজিবি সদস্যকে টাকা না দিলে নৌকা আটক কিংবা ভেঙে ফেলা হয়। ডিবি পুলিশের লাইনম্যানকে টাকা না দিলে মামলার ভয় দেখানো হয়। পাথর চুরির ঘটনায় ডিবির দায়ের করা মামলায় একাধিক ব্যক্তিকে জেলের ঘানি টানতে হয়েছে। মামলার ঝামেলা এড়াতে ডিবি পুলিশের লাইনম্যানকে চাঁদা দিতে হয়।
বারকি শ্রমিকদের কাছে থেকে চাঁদা নেওয়ার বিষয়ে সত্যতা যাচাই করতে পুলিশের লাইনম্যান খ্যাত এরশাদকে ফোন দিলে তিনি সব অভিযোগ অস্বিকার করে প্রতিবেদককে বলেন, আমি (এরশাদ) পুলিশ ফাড়িতে যাই না। আমি একজন পাথর ব্যবসায়ী। এছাড়াও আমার আর কোনো পরিচয় নাই।
বারকি শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে ভোলাগঞ্জ পুলিশ ফাড়ির এএসআই মাহফুজুর রহমানকে ফোন দিলে তিনি প্রশ্ন শুনেই ফোনের লাইন কেটে দেন। এরপর একাধিক ফোন দিলেও আর মোবাইল ফোন রিসিভ করেনি।
সাম্প্রতিক সময়ে সেইভ মেশিন (ইঞ্জিন চালিত এক প্রকার যন্ত্র) দিয়ে পাথর উত্তোলনের অভিযোগে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে জিডি এন্ট্রির বিষয়ে সত্যতা যাচাই এএসআই মুখলেছুর রহমানকে ফোন দিলে তিনি অস্বিকার করেন এবং পরে কথা বলবেন বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।